১৯৮২ সালে আফগান রণাঙ্গনে দু সপ্তাহ মুজাহিদদের সাথে থাকার সুযোগ পেয়ে গেলাম। এসময়ে কাছে থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম তাঁদের যুদ্ধকৌশল ও দৈনন্দিন জীবনাচার! তখন আমার ধারনা সম্পূর্ণ বদলে গেলো। মনে হলো, এরা সাধারণ যোদ্ধাদের থেকে সম্পূর্ণ অন্য এক ধরনের পরজাগতিক চেতনায় উজ্জীবিত। অত্যাধুনিক সামরিক শক্তিতে বলীয়ান রুশ বাহিনীর মোকাবিলায় আফগান মুজাহিদরা যেভাবে জীবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে এক বিষ্ময়কর ও অবিশ্বাস্য দৃশ্য! নিজ চোখে না দেখলে আমি তা কখনো বিশ্বাস করতাম না।
- মল্লিক আহমাদ সরওয়ার
আমরা যখন প্রথম ইসলামি আন্দোলনের পরোক্ষ দাওয়াত পাই, সময়টা ৯৭-৯৮ সাল হবে। সেসময় কিশোরকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতি মাসে ছাপা হতো "পাহাড়ি এক লড়াকু" নামের ধারাবাহিক আফগান উপন্যাস। অতীব জনপ্রিয় এ উপন্যাসটি অনুবাদ করতেন আমাদের প্রিয় কবি ও সুপরিচিত গীতিকার মতিউর রহমান মল্লিক।
ReplyDeleteসোভিয়েত রাশিয়া কেন্দ্রীক নাস্তিক কম্যুনিস্ট বাহিনী আফগানিস্তান সহ পুরো মধ্যএশিয়া দখল করে রেখেছিলো। আফগান মুজাহিদদের দুর্দান্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ, নিখুঁত গোয়েন্দাগিরি, পাতাল ফাঁদের মত কৌশল, ক্লাশিনকভ অস্ত্র, কম্যুনিস্টদের ট্যাঙ্কবহর উড়িয়ে দিতে পুতে রাখা মাইন, কম্যুনিস্টদের বোমার খোলসে মুজাহিদদের ফুলের চারা রোপন, আফগানিস্তানের পাহাড়ে পাহাড়ে গুহা-বাঙ্কার-মারকাজ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের বিমান ক্রাশ ষড়যন্ত্রে মৃত্যুতে কম্যুনেস্টদের আনন্দের আতশবাজী...... চরম উত্তেজনাপূর্ণ সত্যি ঘটনা ও ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাসটি শেষ হয় মুজাহিদদের বিজয়ে এবং কম্যুনিস্ট রাশানদের আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর মধ্য দিয়ে। আফগান মুজাহিদরা তখন পুরো মুসলিম বিশ্বের জনগনের চোখের মনি - শ্রেষ্ঠ বিজয়ী বীর, যারা কম্যুনিষ্ট পরাশক্তি রাশিয়ার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
চিড়-স্বাধীনচেতা, পানিপথ যুদ্ধে মারাঠা হিন্দুদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়া আহমদ শাহ আবদালীর জাতি আফগানদের আমরা তখন থেকেই ভালোবাসতে ও শ্রদ্ধা করতে শিখেছিলাম। আমরা জানতাম , পানিপথ থেকে টিপু-সুলতানের সময় পর্যন্ত আফগান মেহমানদারীর উন্মুক্ত দরজা উপমহাদেশের রাজ্যহারা মুহাজির মুসলমানদের ভরসার বড় এর আশ্রয়স্থল!
এরপর ২-৩ বছরের মধ্যে ইয়াহুদীদের সফল ষড়যন্ত্রের টুইনটাওয়ার হামলার ভিকটিম হলো আফগানিস্তান। শক্তিশালী আমেরিকা ততদিনে আবিস্কার করে ফেলেছে পারমানবিক বোমার চে শতগুন কার্যকর মিডিয়া বোমা। তুমি তোমার শত্রুকে একটা খারাপ নাম দাও এবং হত্যা করো-এই নীতিতে কম্যুনিষ্টবিজয়ী আফগান মুজাহিদদেরকে ট্যাগ দেয়া হতে লাগলো জঙ্গী টেররিষ্ট - এসব নামে। ছাত্র বা তালেবান শব্দটিকেই পরিণত করা হলো ভয়াবহতার অর্থে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যাবস্থা গড়ার আন্দোলনের কারিগরেরাও ভুলে গেলেন আফগান নাগরিকদের কম্যুনিষ্টদের বিরুদ্ধে মহান বিজয়কে, তারা ভুলে গেলেন যে আফগানরা আক্রান্ত আর বিপুল সামরিক শক্তি নিয়ে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা যুদ্ধবাজরা আফগানে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।
আজো নাস্তিক রাশিয়ানদের এদেশীয় এজেন্ট বিভিন্ন শাহবাগী বাম সমাজতান্ত্রিক দলের লেজে আগুন লেগে যায় আফগানদের নাম শুনলে। কলিজা কেঁপে ওঠে। খেয়াল করবেন, ইসলামের কথা শুনলে এরা প্রায় ই বলবে, এইরে বাংলাস্তান হয়ে গেলো, দেশটা আফগানিস্তান হয়ে গেলো! আসলে আফগানদের হাতে প্রচন্ড মার খাওয়া এ নাস্তিক শাহবাগীদের শিরদাঁড়া আজো চিনচিন করে পুর্নিমা অমাবস্যায়।
ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর একবার প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আফগান মুজাহিদদের প্রসঙ্গ যে আমরা এড়িয়ে চলি ইহুদিদের টুইনটাওয়ার ষড়যন্ত্রের পর থেকে - অথচ একসময় আমরা তাদের নিয়ে গর্ব করতাম, এটা কি ঠিক হচ্ছে? জবাব পেয়েছিলাম গোঁজামিল মিশ্রিত ও অস্পষ্ট। আমেরিকার নীতি, হ্য় তুমি আমার পক্ষে অথবা তুমি আমার শত্রু, এই সন্ত্রাসী হুমকিতে আন্দোলনের রথি মহারথিরাও কাবু।
তালেবান নামে ভয়াবহ টেররিষ্ট হিসেবে মিডিয়া বোমায় চিহ্নিত - আফগানদের ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান নেয়া সম্ভব! "ইসলামে জঙ্গীবাদ (মিডিয়া প্রতিষ্ঠিত শব্দ) সমর্থন করেনা " টাইপ সত্য কিন্তু লো কোয়ালিটি তোতাপাখি বক্তব্যের বাইরেও বক্তব্য দেয়া যায়। কম্যুনিষ্টদের বিতারিত করার পর বিশৃংখল আফগানিস্তানে অনেকগুলো গ্রুপ তৈরী হয়ে গিয়েছিলো মুজাহিদদের, তালেবান স্রেফ তাদের একটা অংশ ছিলো যারা সবচেয়ে বড় সাংগঠনিক শক্তি অর্জনে সক্ষম হয়ে আফগানিস্তানের শাসনভার হাতে নিতে সক্ষম হয়। আমরা কথা বলছি রুশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, কম্যুনিস্ট বিতারণকারী সমগ্র আফগান মুজাহিদদেরকে নিয়ে, কোন বিশেষ গ্রুপকে নিয়ে নয়।
কোন নির্জন দ্বীপে আটকা পরা অবস্থায় নিরূপায় আদম সন্তানের জন্য আল্লাহ ইসলামের কড়া হালাল-হারামের বিধান ও শিথিল করে দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের জায়েজ কৌশল নির্ধারনের খুব বড় একটা নিয়ামক হল ভূ-রাজনৈতিক